২ ফেবারিট দল ও ২ সেরা খেলোয়াড়ের ফাইনাল
আরেকটি রেকর্ড গড়া হলো না মরক্কোর। পারেনি ফ্রান্সের বিপক্ষে ফুটবল দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিতেও। বুধবার রাতে কাতার বিশ্বকাপে উত্তর পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয় ফ্রান্স। আল বায়েত স্টেডিয়ামে তাদের ২-০ গোলের জয় ১৮ তারিখে লুসাইল স্টেডিয়ামে ফাইনাল দাঁড় করাচ্ছে আর্জেন্টিনার সামনে।
ল্যাতিন ও ইউরোপিয়ান এই দুই দেশের যে ই ফাইনালে জিতবে তাদেরই দখলে যাবে তৃতীয় শিরোপা। সবচেয়ে বড় বিষয় ফাইনালে আর কোনো চমক জাগানো দল নেই। উপস্থিতি দুই ফেবারিট আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের।
প্রতি বিশ্বকাপেই ফেবারিটের মর্যাদা নিয়ে শুরু করে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সতো গত বারের বিশ্বকাপজয়ী হিসেবেই সম্ভাব্য শিরোপা জয়ীর তালিকায়। তবে কোনো দলেরই অপরাজিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটা হলো না। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা সৌদি আরবের কাছে এবং ফ্রান্স তিউনিসিয়ার কাছে হেরেছিল।
কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত দুই দল নেদারল্যান্ডস ও ক্রোয়েশিয়া যথাক্রমে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে পরাজয় বরণ করে আর্জেন্টিনার কাছে। অপর হার না মানা দল মরক্কোর মাথানত করা ফ্রান্সের কাছে হেরে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়েই ফরাসীদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের মিশন শুরু হয়েছিল নক আউটে। ওই ম্যাচ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ম্যাচের তালিকায়। এবার আর্জেন্টিনার সুযোগ সেই হারের বদলা নেয়া। ফিফা র্যাংকিংয়ে বেশ আগেই শীর্ষস্থান হারিয়েছে ফ্রান্স। আর্জেন্টিনা কবে র্যাংকিংয়ে সবার উপরে ছিল তা অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হবে। তবে সর্বশেষ র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান পিঠাপিঠি। আর্জেন্টিনা আছে তিনে। আর ফ্রান্স চার নম্বারে।
এবারের বিশ্বকাপে ফেবারিট ছিল ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি এবং বেলজিয়ামও। গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া এবং নেদারল্যান্ডসকে কেউই শিরোপা জিততে পারার তালিকায় রাখেনি। এদের মধ্যে জার্মানি এবং বেলজিয়ামের বিদায় গ্রুপ পর্বে। স্পেন ছিটকে পড়ে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। ইংল্যান্ড ও ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায়। ফলে সর্বশেষ যে দুই ফেবারিট সেই আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের মধ্যেই হচ্ছে এবারের শিপোরা লড়াই। ১৯৯৮ এবং ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার দুই বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনা গত শতাব্দীতে। ১৯৭৮ সালের পর ১৯৮৬ সালে।
১৮ তারিখের ফাইনাল একইসাথে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি এবং কিলিয়ান এমবাপেরও দ্বৈরথ হবে লুসাইল স্টেডিয়ামে। দুইজনই আছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল্ডেন বুট ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জেতার প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আসরে এই পর্যন্ত ৫ গোল করেছেন লিওনেল মেসি। সমান গোল কিলিয়ান এমবাপেরও। সেমিফাইনালে মেসি গোল করলেও এমবাপে তা করতে ব্যর্থ। উভয়ই ক্লাব ফুটবলে একে অপরের সতীর্থ। পরস্পরের গোলের যোগানদাতা। তবে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) এই দুই সঙ্গী ফাইনালে একে অপরের চির শত্রু। সেই ময়দানী লড়াইয়ে দেখা যাবে কে কাকে ছাড়া কতোটা সফল। তবে উভয়ের পায়ের কাজ, গতি আর গোল করার দক্ষতা দেখেছেন সকলে।
আরও পড়ুন :হেরেও অভিনন্দনে সিক্ত মরক্কো।
সেমিফাইনালে ফ্রান্স দুই গোলে জিতলেও মোটেই তা সহজ ছিল না। মরক্কো ছেড়ে কথা বলেনি। গোল করতে না পারার ফলেই মুসলিম দেশটিকে হারতে হয়েছে। বল পোস্টে লাগায় সমতা আনতে পারেনি বিরতির পরপরই। সে তুলনায় আর্জেন্টিনা এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলে।
ফাইনালে নিশ্চিত আর্জেন্টিনার দর্শকদেরই ৯৫ ভাগ উপস্থিতি থাকবে গ্যালারিতে। সেমিতেও কয়েক হাজারের বেশি ফরাসিকে দেখা যায়নি মাঠে। রাশিয়া বিশ্বকাপেও হাজার পাঁচেকের বেশি দর্শক ছিল না। অবশ্য দর্শক উপস্থিতি থাকলে কি জেতা যায়। মরক্কোতো ৯০ শতাংশের বেশি সমর্থকের গগন ফাটা চিৎকার সত্ত্বেও হার ঠেকাতে পারেনি ফ্রান্সের সাথে।
ফাইনালটা একইসাথে জুলিয়ান আলভারেজ ও অলিভার জিরুডেরও গোল্ডেন বুট জেতার লড়াই। আর্জেন্টিনার আলভারেজ ৪ গোল দিয়ে ফ্রান্সের জিরুডের সাথেই যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন।
লড়াইটা দুই কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি এবং দিদিয়ের দেশ্যামসের। আর্জেন্টিনাকে গত বছর কোপা আমেরিকা এনে দেয়া এই কোচের এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। আর দেশ্যামস টানা দ্বিতীয়বারের মতো তো বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলের ডাগআউটে।