আপডেট নিউজ:

দি ডেইলী বার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

‌পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স নেই, নিরাপদ সড়ক কীভাবে হবে?

দারাজের পুরষ্কার, এমন অজানা লিংকে কেউ ভুলেও ক্লিক বা প্রেবেশ কিংবা শেয়ার করবেন।

ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শিরোপা জয় আর্জেন্টিনার

সর্বোচ্চ পেশাদারী উৎকর্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিন : সেনা সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্ধ বিরোধিতা করছে: ওবায়দুল কাদের

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম খোকন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

রিফাত হত্যা মামলা: মিন্নি, ফরাজি, রাব্বি, সিফাত, হৃদয় ও হাসান এর মৃত্যুদণ্ড। বাকি ৪ আসামি খালাস।

ধর্ষণ মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর গ্রেপ্তার

শিরোনাম:

ঝিনাইদহে আদম ব্যাবসায়ী টিটোর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত পরিবার : প্রতিবাদ করার মতো নেই কেউ

সাইফুল ইসলাম ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ

দালাল বা আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত সর্বশান্ত হচ্ছে শহর- গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার সাধারণ বেকার যুবক।
ঝিনাইদহে আদম ব্যাবসায়ী টিটোর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত পরিবার : প্রতিবাদ করার মতো নেই কেউ
ঝিনাইদহে আদম ব্যাবসায়ী টিটোর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত পরিবার : প্রতিবাদ করার মতো নেই কেউ

প্রতারক দালালদের কাছে এ যেন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদম ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে বিদেশে মিলবে ভালো বেতন ও ভালো চাকরী। এই রকম প্রলোভন দেখিয়ে জেলার বহু দুস্থ পরিবারের বেকার যুবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র ।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেও প্রশাসন যেন নিরব ভূমিকা পালন করছে। আর এ-কারণে অসহায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো কোনো বিচার না পেয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে বলেও অভিযোগ।

ঠিক তেমনি করেই অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহে টিটো নামের একজন আদম ব্যবসায়ী শত শত মানুষকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তার প্রতারনার খপ্পরে পড়ে মালায়েশিয়া যেতে পানি পথে সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে অনেকের জীবন।

জানা গেছে, ঝিনাইদহের সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর, গাড়ামারা, তেতুলবাড়িয়া, মিয়াকুন্ডু গ্রামের প্রায় ২০/২৫ টি পরিবার তাদের প্রিয় জন হারিয়ে নির্বাক জীবন জাপন করছে তা যেন দেখভাল করার মতো কেউ নেই। স্ত্রী সন্তান অন্ধের মতো চেয়ে আছেন কখন ফিরে আসবেন প্রবাসী কর্তা, মা বাবা পথ চেয়ে বসে আছে তার সন্তান কবে ফিরে আসবে। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন,বছরের পর বছর গেলেও ফিরে আসে না তারা, যোগাযোগ করতে পারে না পরিবারের স্বজনেরা।

এবিষয়ে সন্তান হারা পিতা-মাতা,স্বামী হারা স্ত্রী, বাবা হারা সন্তানেরা অনেক বার ঝিনাইদহের স্থানীয় প্রশাসনের নিকট ধর্না দিয়েও কাজ হয়নি এমনি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এই টিটোর যোগাযোগ ঝিনাইদহ থেকে শুরু করে ঢাকা হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তার। তারপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে অনেকের নিকট থেকে টাকা নেয় কিন্ত তার মধ্যে থেকে দুই একজন কে পাঠিয়ে বাকিদের নাকের ডগায় দঁড়ি দিয়ে ঘুরাতে থাকে।

অনলাইন “দৈনিক ডেইলী বার্তার” অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আলোচিত আদম ব্যবসায়ী টিটোর পুরা নাম শাহিনুর রহমান টিটো। সে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কুমড়াবাড়িয়া গ্রামের ইউসুফের ছেলে। সে এই আদম ব্যবসা করে গড়ে তুলেছে অট্টালিকা বাড়ি গাড়ি সহ সম্পদের পাহাড়। তার বাড়ি আছে ঝিনাইদহ শহরের চাকলা পাড়ায়, ঢাকা সহ নিজ গ্রামে। সে ঝিনাইদহে ঘুরে বেড়ায় দামি গাড়িতে। তার শক্তিশালী নেট ওয়ার্কে যুক্ত আছে সাংবাদিক সহ প্রভাবশালী অনেকে। যার কারনে অসহায় মানুষের বোবা কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করায় নেই। অনেক বার মিডিয়ার আলোচনায় উঠে এসেছে এই টীটোর নাম। কিন্ত কি এক অজ্ঞাত কারনে সে থেকে গেছে ধরা ছোয়ার বাইরে।

আরো জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামের আব্দুর রহিম। টিটোর খপ্পরে পড়ে পানি পথে মালায়েশিয়া যেতে যেয়ে জীবন নিয়ে ফিরে আসা কাহিনি। দুর্বিষহ জীবনের লোমহর্ষ নির্মম কাহিনী। যা পাথর হৃদয় গ্রস্থ মানুষকেই প্রকম্পিত করে।

এদিকে আরও জানা যায়,ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ড উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে বাবুল আখতার এর কাছে, তিনি ২০১১ সালে বিদেশ যাওয়ার জন্য ৪ কিন্তিতে নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং ১৪/১২/২০১১ তারিখে ব্যংকের মাধ্যমে ১ লক্ষ টাকা টিটোকে দেই। সে আজ অবধি আমাকে বিদেশ পাঠাতে পারে নাই এবং আমার পাওনা টাকা ফেরত দেয় নি। এই প্রসঙ্গে চাঁদপুর ইউনিয়নের ইউপি সদর আব্দুল হাকিম ও কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হায়দার আলীর মাধ্যমে কয়েকবার শালিস হয়েছে তারপরেও সে ঘুরা ঘুরি করে আমাকে ঐ টাকা ফেরত দেয় নি।

আরেক ভুক্তভোগী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গাড়ামারা গ্রামের ইসহাক আলীর ছেলে হাফিজুল জানায় যে মানব পাচারকারী টিটো আমার ছোট্ট ভাই সাজেদুর কে মালায়েশীয়া নিয়ে যেয়ে ভাল চাকুরি দেবে বলে প্রথম কিস্তিতে ৫০ হাজার এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার কিছুদিন পর ভিসা এসে গেছে বলে মোবাইলে জানালে তখন টিকিট বুকিং বাবাদ ৮০ হাজার টাকা ১৯/০২/২০১২ তারিখে তাকে দেই। এই ভাবে তাকে মোট ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেই। কিন্ত সে আমার ভাইকে বিদেশে পাঠান নি।

এই টাকা ফেরতের ব্যপারে গ্রামে অনেক বার শালিস হয়েছে কিন্ত তাতে কোন সূরাহ হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুল আজিজ জানায় যে প্রবাসী হওয়ার কারনে তার সাথে সম্পর্কের সূত্র ধরে আমার ছেলেকে মালায়েশিয়া পাঠানোর জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেই। তারপরে টাকা চাইলে ১৪/১২/২০১১ তারিখে ইউসিবি ব্যংকের মাধ্যমে দুই লক্ষ টাকা ও পরে ১৯/০২/২০১২ তারিখে ৩০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেই। তবে সে আজ অবধি আমার ছেলে কে বিদেশে পাঠাতে পারি নি এবং সেই টাকা ফেরতও দেয়নি। আমাদের অনেক ঘুরাঘুরি, শালিস দরবার করেও কোন লাভ হয়নি।

ঝিনাইদহ শহরের ব্যপারী পাড়ার আবুল হোসেন সড়কে বসবাস রত আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান জানায়, টিটো আমাকে বিগত ৮ বছর পূর্বে ইরাকে পাঠানোর কথা বলে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা, পরের কিস্তিতে ইউসিবি ব্যাংকের ম্যধামে ১ লক্ষ টাকাসহ মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেই। সে আজ অবধি আমাকে ইরাকে পাঠাননি এবং পাওয়া টাকা ফেরত দেয়নি। পরে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন ভাবে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।

জারগ্রামের আব্দুর রাজ্জাক প্রতিবেদককে জানায়, টিটো বিদেশে পাঠানোর নাম করে ৬ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। উপরের ভুক্ত ভোগী ৫ জনই গত (২৩ শে জুলাই) রোজ বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ থানায় মানবপাচার কারী টিটোর নামে অভিযোগ দায়ের করেছে।

এই প্রসঙ্গে শাহিনুর রহমান টিটো কে ( ৮ ই আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মোবাইলে ফোন করলে সে বিদেশে লোক পাঠানোর বিষয় অস্বীকার করে বলে যে আমি এই সকল বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এখন ঘুমায়ে আছি পরে আপনাকে ফোন দিব বলে ফোন কেটে দেয়।

ঝিনাইদহ সদর থানার অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মোঃ আব্দুল হক টিটোর বিরুদ্ধে ৫ টি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলে যে টিটো একজন উচ্চ মাপের আদম ব্যবসায়ী। আমার আপন চাচাত ভাই কে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে কিন্তু তা পেরত দিচ্ছে না।
ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের নিকট এই ধরনের অভিযোগ আসলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।