ভোক্তা অধিকারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে আলমডাঙ্গার দুটি মিষ্টির দোকানে টাকা দাবিঃ ব্যবসায়িমহলে তোড়পাড়
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে মোবাইলফোনে রিং দিয়ে আলমডাঙ্গার দুটি মিষ্টির দোকানে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনা জানাজারি হলে আলমডাঙ্গায় ব্যবসায়ি মহলে তোড়পাড় শুরু হয়।
জানা যায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ০১৭১৩১৬৬৬২১ নং থেকে আলমডাঙ্গা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম স্বপনের মোবাইলফোনে রিং দিয়ে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হোসেন দাবি করেন। সে সময় তিনি কাউন্সিলরের নিকট আলমডাঙ্গা শহরের বড় বড় মিষ্টির হোটেল মালিকের মোবাইল ফোন নং জানতে চান। কিন্তু কাউন্সিলর স্বপন তাৎক্ষণিকভাবে মিষ্টির হোটেল মালিকদের মোবাইলফোন নং দিতে পারেন নি। তিনি দ্রুত আলমডাঙ্গার অধিকারী মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিকের ছেলে রাজ কুমার অধিকারীকে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। সে সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করা ব্যক্তি জানান, “আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গার অনেক মিষ্টির হোটেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। আপনার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামও সেই তালিকায় রয়েছে। তালিকা থেকে নাম কাটাতে হলে এখনি বিকাশ করে ৪০ হাজার টাকা পাঠান।“
প্রত্যুত্তরে রাজকুমার জানান যে, তিনি বাইরে আছেন। বাড়ি ফিরে বাবার সাথে কথা না বলে টাকা দিতে পারবেন না।
এরপর পর আলমডাঙ্গা হাইরোডে অবস্থিত “কুটুমবাড়ি” নামক মিষ্টির হোটেলের মালিক আনোয়ার হোসেনের মোবাইলফোনে একই নং থেকে রিং দিয়ে অনুরূপভাবে নিজেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব হোসেন দাবি করা হয়।
আনোয়ার হোসেন জানান যে, তাকে বলা হয় “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান টিম আপনার হোটেলসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে অভিযান চালাবে। আপনার হোটেলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও হোটেল সিলগালা করা হবে। অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হবে। এই তালিকা থেকে নাম কাটতে হলে একনই বিকাশে ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।“
জবাবে আনোয়ার হোসেন জানান যে, তিনি গরীব মানুষ, এত টাকা দিতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করা ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। সে সময় হোটেল মালিক পরদিন সকাল ১০টায় টাকা দিতে সম্মত হন।
এরই মধ্যে এ ঘটনা শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিজেস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট নেই। একথাও ব্যবসায়িদের অনেকে জেনে যান। অনেকে চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, টাকা দাবি করা ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেটকে টাকা দেওয়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নিয়ে বেঁধে পুলিশের হাতে তুলে দেন।“
সকালে যথাসময়ে ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করা ব্যক্তি একই নং থেকে আনোয়ার হোসেনকে রিং দিয়ে ১০ হাজার টাকা বিকাশে দিতে তাগাদা দেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিকাশে টাকা দেবো না। আপনি সরাসরি নিয়ে যান। আপনার সাথে একটু পরিচয় হোক।“
আনোয়ার হোসেনের এমন নেতিবাচক কথায় রেগে গিয়ে অজ্ঞাত কাউকে উদ্দেশ্য করে ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট রাগত স্বরে বলেন, “এই গাড়ি বের করো তো।“ কিন্তু ভদ্রলোকের গাড়ি আর আসেনি আলমডাঙ্গায়।