আপডেট নিউজ:

দি ডেইলী বার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

‌পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স নেই, নিরাপদ সড়ক কীভাবে হবে?

দারাজের পুরষ্কার, এমন অজানা লিংকে কেউ ভুলেও ক্লিক বা প্রেবেশ কিংবা শেয়ার করবেন।

ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শিরোপা জয় আর্জেন্টিনার

সর্বোচ্চ পেশাদারী উৎকর্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিন : সেনা সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্ধ বিরোধিতা করছে: ওবায়দুল কাদের

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম খোকন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

রিফাত হত্যা মামলা: মিন্নি, ফরাজি, রাব্বি, সিফাত, হৃদয় ও হাসান এর মৃত্যুদণ্ড। বাকি ৪ আসামি খালাস।

ধর্ষণ মামলায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর গ্রেপ্তার

শিরোনাম:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমায় বয়া না থাকায় ঝুঁকিতে জেলেরা

জিয়াবুল হক, টেকনাফ

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় বয়া না থাকায় মাছ শিকারত জেলেরা চরম ঝুঁকিতে। সেই কারণে টেকনাফের সেন্টমার্টিনসহ ওই অঞ্চলে অবস্থানরত জেলেরা প্রায়ই ভুল করে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। তখন তাদের ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রুত পথ চিনে ফিরে আসতেও তাদের সমস্যা হয়ে দাড়ায়। এই পরিস্থিতিতে নানা আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জেলেরা। তারা অনতিবিলম্বে দীর্ঘদিন ধরে জলসীমা চিহ্নিতকরণে বয়া স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে।

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের বেশিরভাগ মানুষ যুগ যুগ ধরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সীমান্তে জল সীমানা চিহ্নিতকরণে বয়া থাকা জরুরি হলেও তা সেন্টমার্টিন এলাকায় নেই। এ কারণে সম্প্রতি ইঞ্জিন বিকল হয়ে মিয়ানমার জলসীমায় ঢুকে পড়ে বাংলাদেশি অনেক মাছধরার ট্রলার। মিয়ানমার নৌবাহিনী ওই ট্রলারের ১৭ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে। পরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মাধ্যমে এসব জেলেদের ফেরত পাঠায় মিয়ানমার। তবে আটক অনেক জেলে এখনও মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছেন।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে বৈরী আবহাওয়া, অন্যদিকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ধাওয়ার ভয় মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে জেলেদের। প্রতিনিয়ত জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির কথা বার বার বলে আসলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা মো. জুবাইর বলেন, তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় সাগরে মাছ শিকার। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সেন্টমার্টিন বঙ্গোপসাগরের এলাকায় সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে মাছ শিকার করে আসছেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরতে ধরতে অনেক সময় আমরা পথ হারিয়ে ফেলি। গভীর সাগরে কোনও কোনও সময় মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যায়। অনেক সময় তাদের নৌবাহিনীর ধাওয়া খেতে হয়। আমরা ভয়ে ভয়ে থাকি। জলসীমায় কোনও আধুনিক বয়া না থাকায় আমাদের করণীয় কিছু থাকে না।’

সাগর পাড়ে ছেঁড়া জাল ঠিক করছিলেন নুরুল বশর। তার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানায় বঙ্গোপসাগরের অথৈ পানিতে কোনও ধরনের চিহ্নিতকরণ বয়া নেই। এ কারণে আমাদের অনেক জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। এদের অনেককে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনলেও অনেকেই মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি আছেন।’

আরেক জেলে আবদুস সালাম বলেন, ‘অনেক সময় বৈরী আবহাওয়া জেলেদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় মিয়ানমারের জলসীমায়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাতাসের গতিতে পথ ভুলে মিয়ানমারের জলসীমায় চলে যায়। অপরদিকে, মিয়ানমারের অনেক জেলে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। এতে করে আমাদের মৎস্য সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে।’

এবিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলেরা রয়েছে নানা সমস্যায়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমানায় চিহ্নিতকরণ বয়া না থাকায় প্রতিনিয়ত সমস্যা ও আতঙ্কে দিন কাটছে হচ্ছে। বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনও প্রতিকার পাইনি। তাই দ্রুত জলসীমানা চিহ্নিতকরণ বয়া স্থাপন করার জন্য সেন্টমাটিন দ্বীপবাসীর পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

এব্যাপারে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম ওয়াসিম মকছুদ বলেন, বঙ্গোপসাগরের যেসব জেলেরা মাছ শিকার করেন, তাদের অধিকাংশ জানেন না কোনটি কোন দেশের জলসীমা। মাছ শিকারত অবস্থায় এক সময় ভুলেই চলে যান অন্য দেশের জলসীমায়। এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশে নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর জেলেদের মধ্যেও রয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ জলসীমায় এখনও আধুনিক বাতি বয়া স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই, জেলেদের নিজ থেকেই সচেতন হতে হবে।’

এম ওয়াসিম মকছুদ আরও বলেন, ‘টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যরা বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে এ ধরনের অনেক জেলেকে মাদকসহ আটক করেছেন। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের সময় বড় বড় চালান কোস্ট গার্ড সদস্যরা জব্দ করতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তাসহ জেলেদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীরা।’

শুধু জেলেদের নয়, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত বড় বড় জাহাজ ও ট্রলার থেকে শুরু করে সব ধরনের নৌ-যানকে বয়া না থাকায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একইভাবে পড়তে হচ্ছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলরত পর্যটকবাহী জাহাজ গুলোকেও। তাই দ্রুত বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমা চিহ্নিত করে বয়া স্থাপনের দাবি সেন্টমার্টিন দ্বীপে বসবাসরত জেলেদের।