নাটোরের হালসায় করোনাকালে রাতের আকাশে ‘আলোকিত’ ঘুড়ি
আমিরুল ইসলাম, নাটোর জেলা প্রতিনিধিঃ
চলছে করোনাকাল। যাদের দুরন্তপনায় মেতে থাকার কথা, সেই শিশু-কিশোররাও কার্যত এই দুঃসময়ে ঘরবন্দি। এই বন্দিদশা থেকে পরিত্রাণ পেতে উত্তরের জেলা নাটোরে শিশু-কিশোরদের অনেকেই মেতে উঠেছে ঘুড়ি উৎসবে।
রাতের আকাশে শত শত ‘আলোকিত’ ঘুড়ি উড়ছে জেলার উপজেলার গ্রামগুলোতে। ঘুড়িগুলোর মধ্যে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা রঙের এলইডি বাতি।
লকডাউনের মধ্যে এই ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য রাতের প্রকৃতিতে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
অনেকে বলছেন, মনোমুগ্ধকর এই আয়োজন যেন করোনামুক্ত ভোরের বার্তা।
সোমবার রা্তে নাটোর উপজেলার হালসা সহ আশ-পাশের এলাকার আকাশে উড়ছে শত শত ঘুড়ি। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, আকাশের তারাগুলো বুঝি নিচে নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানায়, শত শত ঘুড়ি আগে কখনো ওড়াতে দেখেনি তারা, তাও রাতের বেলা।
আগে ঘুড়ি ওড়ানো হতো দিনে। রাতের বেলা হারিকেন বেঁধে ঘুড়ি উড়িয়ে দেওয়াও দেখেছে তারা, তবে তা সংখ্যায় ছিল একটা-দুটো। রাতের আকাশে শত শত ঘুড়ি ওড়ানোর এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এই প্রথম দেখছে তারা।
ফারুক ও কবির জানান পলিটেকনিক এখন বন্ধ । সবাই ঘুড়ি ওড়াচ্ছে তাই আমরাও দেখাদেখি ঘুড়ি বানিয়ে ওড়াচ্ছি। সবাই মিলে অনেক মজা করছি।
মা-বাবাও উৎসাহ দিচ্ছেন। বাঁশ কেটে নিজেরাই ঘুড়ি তৈরি করছি।
মোবাইলের ব্যাটারির সংযোগে বিশেষভাবে জিরো পাওয়ারের ছোট ছোট বিভিন্ন রঙের এলইডি বাতি এতে জুড়ে দেওয়া হয়।
প্রতিটি ঘুড়ি তৈরিতে খরচ হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। যে ঘুড়িতে যত বেশি বাতি থাকে সেটিকে তত বেশি উজ্জ্বল দেখায় এবং অনেক দূর থেকে দেখা যায়।
এসব ঘুড়ির বেশির ভাগই ‘চিলঘুড়ি’ ও সাপাঘূড়ি। তবে ভিন্ন আকৃতিও দিচ্ছে কেউ কেউ।
হালসার ড্রিম গার্ডেন এর উদ্যোক্তা আজিজুর রহমান বলেন, দিনের বেলায় ছোট ভাই ও বন্ধুরা বাড়িতে বসে অলস সময় পার করছে। তাই ঘুড়ি ওড়ানোর উদ্যোগ নিই রাতের বেলায়। একজন, দুজন করে এখন আমাদের গ্রামসহ চারপাশে শত শত ঘুড়ি উড়ছে।
একই এলাকার তানজিল তমাল বলেন, সন্ধ্যার পর ঘুড়ি উড়িয়ে দিই আকাশে। আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কার ঘুড়ি কত সুন্দর দেখায়।
সে জন্য যে যার মতো আলোকসজ্জা করে। যে ঘুড়িতে বেশি এলইডি বাতি থাকে সেটিকে আকাশে তত বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
স্থানীয় সাংবাদিক কাউছার হাবীব বলেন, ‘আগে দেখতাম শিশু-কিশোররা দিনের বেলায় ঘুড়ি ওড়াত। এই করোনা পরিস্থিতিতে রাতে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে।
এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি। যে কাউকে এই দৃশ্য মুগ্ধ করবে।’ তিনি বলেন, ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে তারা যে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উৎসবে মেতেছে, এটা সত্যিই আনন্দের।
আমরা চাই, আমাদের শিশু-কিশোররা এবং যুবকরা এমন সুস্থ বিনোদনের মধ্য দিয়ে করোনাকে জয় করুক।
হালসা ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম প্রাং বলেন, করোনাক্রান্ত জনপদে রাতের বেলায় ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য সত্যিই স্বস্তি দেয়। এ দৃশ্য কেউ না দেখলে বুঝতে পারবে না তা কতটা মনোমুগ্ধকর।
এর মধ্যে যেন করোনামুক্ত ভোরের বার্তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।